সকল মেনু

রিজার্ভের টাকা চুরি : আশার আলো দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক

রিজার্ভ ব্যাংক থেকে টাকা চুরির এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর মোট চুরি হওয়া টাকার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চুরি হওয়া মোট অর্থের পরিমাণ ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে শ্রীলঙ্কায় পাচারকৃত ২০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাক। পাশাপাশি বাকি ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারও পুরোপুরি উদ্ধার করা যাবে বলে আশার আলো দেখছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত হ্যাকারদের ওপরই সন্দেহের তীর বিদ্ধ করা হচ্ছে।

বুধবার সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে তফসিলী ব্যাংকগুলোর সাথে জরুরি বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

শুভংকর সাহা বলেন, ‘হ্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কায় এবং ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকর সহায়তায় সেখানে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা হয়েছে। আর ফিলিপাইনে স্থানান্তরিত অর্থ উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে কিছু অর্থ ব্যাংকিং মাধ্যমে মজুদ আছে, কিছু অর্থ নগদ করা হয়েছে। তবে দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পুরো অর্থটাই ফেরত পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হ্যাকিংয়ের মাধ্যমেই এই অর্থ চুরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আর কিছু বলা যাচ্ছে না।’

এসময় উপস্থিত বিশ্বব্যাংকের সাবেক আইটি বিশেষজ্ঞ রাকেশ আস্তানা জানান, বাইরে থেকেই এ হ্যাকিং করো হয়েছে বলে আমরা এখনো মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কারও যোগসাজশ আছে কিনা তা বলা যাচ্ছে না।

এদিকে ফিলিপাইনের ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ইনকোয়েরে’র গত ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে ১০ কোটি ডলার মানি লন্ডারিং হয়েছে। ওই খবরে আরও বলা হয়, দেশটির মাকাতি শহরে অবস্থিত রিজার্ভ কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের একটি শাখার মাধ্যমে ওই অর্থ ফিলিপাইনে আসে। চীনা হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা সেখানকার কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়। হ্যাকার দল এ অর্থ প্রথমে ফিলিপাইনে পাচার করে। সেখান থেকে চুরি হওয়া অর্থের এক অংশ পাচার করা হয় শ্রীলঙ্কায়। ওই অর্থ ফিলিপাইনে স্থানান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত হলে সেখানে দুই কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়। তারা ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুদিনে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের মানিলন্ডারিং ইউনিট বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ একাউন্ট থেকে একসঙ্গে ১০১ মিলয়ন মার্কিন ডলার চুরি হয়ে যায়। একমাস পর গণমাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এ জালিয়াতির তথ্য প্রকাশিত হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সোমবার (৭ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এর সত্যতা নিশ্চিত করে।

এদিকে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় এক বিদেশি নাগরিকসহ কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের সত্যতাও বেরিয়ে আসে। বিদেশি নাগরিকের দেয়া বিভিন্ন তথ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছিল ব্যাংকিং খাতে। এ ঘটনার রেশ শেষ হতে না হতেই রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির মত আরও একটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটলো। যা কিনা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top