সকল মেনু

কান্না করায় শিশুকে আছড়ে হত্যা

শিশু হাফিজুল    -ফাইল ছবি

শিশু হাফিজুল -ফাইল ছবি
বানারীপাড়া প্রতিনিধি
খুলনায় রাকিব, বরগুনায় রবিউল ও সিলেটে রাজনের পর এবার বরিশালের বানারীপাড়ায় শিশু হাফিজুল। মাত্র তিন বছর বয়সেই সে এক নিষ্ঠুর নারীর নির্মম শিকার হয়েছে। আগের ঘটনাগুলোয় মাছ চুরি, মোবাইল ফোন চুরির মতো অভিযোগ থাকলেও শিশু হাফিজুলের ‘অপরাধ’ ছিল কান্না। তাই নির্মম সাজায় তার কান্না চিরতরে ‘থামিয়ে’ দেওয়া হয়েছে। কান্নার শব্দে ‘বিরক্ত’ হয়ে হাফিজুলকে আছাড় দিয়ে হত্যা করেছে তাদের বাড়িওয়ালার স্ত্রী। আগেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল মেরে ফেলার। আতঙ্কিত হয়ে তার বাবা অন্যত্র বাসা নেয়। শুক্রবার নতুন বাসায় ওঠার কথাও ছিল। তার আগেই ছেলেকে হত্যার মাধ্যমে নিষ্ঠুর ওই নারী কেড়ে নিয়েছে রিকশাচালক বাবা রিপনের স্বপ্ন।
রিকশাচালকের স্বপ্ন কেড়ে নিল নিষ্ঠুর নারী

বাড়িওয়ালার স্ত্রী ও ফেয়ারি কুইনের পরিচালক নূপুর বেগম
বৃহস্পতিবার বিকেলের এ ঘটনায় বানারীপাড়া থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক বাড়িওয়ালার স্ত্রী নূপুর বেগম। তাকে ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি আহসান।
বর্বর এ ঘটনায় গোটা বানারীপাড়ায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। শুক্রবার সকালে শত শত নারী-পুরুষ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতকের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে তারা থানায় গিয়েও ওসির সঙ্গে দেখা করে ঘাতকের শাস্তির দাবি জানান।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বানারীপাড়া পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বাবলা মৃধার বাড়িতে সপরিবারে ভাড়া থাকেন রিকশাচালক রিপন। বৃহস্পতিবার বিকেলে হাফিজুলের কান্নার শব্দে ঘুমাতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বাড়িওয়ালার স্ত্রী ও ফেয়ারি কুইনের পরিচালক নূপুর বেগম। সে রিপনের ঘরে ঢুকে তিন বছর চার মাস বয়সী হাফিজুলকে খাটের ওপর আছাড় মারে ও ঘাড় মটকে দেয়। এতে শিশুটি বুকে ও মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। পরে তাকে প্রথমে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা হাফিজুলকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু অর্থাভাবে ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় যেতে পারেননি বাবা রিপন। পরে তাকে শেবাচিম থেকে আবার বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। সেখানে রাত ১১টার দিকে চিকিৎসকরা হাজিফুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
রিপন জানান, পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ফেয়ারি কুইন বিউটি পার্লারের পেছনে দেড় মাস আগে ঘর ভাড়া নিয়ে রিপন স্ত্রী ও দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ঘর ভাড়া নেওয়ার পর থেকেই শিশুদের কান্না নিয়ে ঘর মালিকের স্ত্রী নূপুর বেগম বিরক্ত হয়ে উচ্চস্বরে বকাঝকা ও ভয়ভীতি দেখাত। তাকে ঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্যও বলা হয়। বকাঝকা ও হুমকি দেওয়ায় শিশু হাফিজুল সব সময় ভয়ে থাকত। তার মধ্যে আতঙ্ক কাজ করত। এ কারণে সে ঘর ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নেয়। শুক্রবার তার নতুন বাসায় ওঠার কথা ছিল। এর একদিন আগেই তার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
বানারীপাড়া থানার ওসি জিয়াউল আহসান জানান, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় রিপন বাদী হয়ে শুক্রবার নূপুরকে আসামি করে বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top