সকল মেনু

পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব সবার

ঢাকা: নদী দূষণ, পাহাড় কাটা ও কৃষি জমিতে রাসায়নিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধসহ পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতি হিসেবে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব সরবার। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সবাইকে বৃক্ষরোপণ করতে হবে।

রোববার (৩১ জুলাই) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা’ এবং ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০১৬’ এর উদ্বোধন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দিবসের স্লোগান ‘বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ, বাঁচাই প্রকৃতি-বাঁচাই দেশ’, আর বাংলাদেশে এ দিবসের স্লোগান ‘জীবিকার জন্য গাছ, জীবনের জন্য গাছ’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতি হিসেবে সকলের দায়িত্ব পরিবেশ রক্ষা করা। আমাদের দেশে প্রচুর নদী-নালা ও খাল-বিল রয়েছে। বাংলাদেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে। এই দেশের পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আমাদের ব্যবস্থা নিতে। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। কৃষিতে রাসায়নিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

‘নদী দূষণের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার যেমন আছে, আছে বর্জ্য আর জলযানও। এসব থেকে নদী ব্যাপকভাবে দূষণ হয়ে থাকে। এ বিষয়ে সবার সতর্ক থাকতে হবে।’

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বনভূমি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ম্যানগ্রোভ বন তৈরি করতে হবে। নারকেল বাগান তৈরি করতে হবে। যার মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুযোর্গ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।

ফলজ, বনজ ও ভেষজ- এই তিন ধরনের গাছ লাগানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘যেখানে শিল্পাঞ্চল থাকবে, সেখানে জলাধারের ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে আবাসিক এলাকা তৈরি করা হবে, সেখ‍ানেও জালাধারের ব্যবস্থা করতে হবে। যারা শিল্পাঞ্চল-আবাসিক এলাকা তৈরি করবেন, তাদেরই জলাধারা তৈরি করতে হবে। পারিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিটি এলাকায় জলাধার রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, আগুন লাগলে পানি পাবো কোথায়, এজন্য আমাদের স্বার্থেই প্রতিটি এলাকা ও স্থাপনার পাশে জলাধার রাখতে হবে।

আওয়ামী লীগ কৃষক লীগকে সঙ্গে নিয়ে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি যখন দেখা দিয়েছে তখন আমরা বসে থাকিনি। নানামুখী কাজ করে যাচ্ছি। যেখানে আমাদের বনভূমি ৯ শতাংশ ছিলো, সেটা এখন ১৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য দেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি তৈরি করা।

কক্সবাজারে যে ঝাউবন দেখা যায় সেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাগিয়ে গেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকবেলায় বঙ্গবন্ধু ওই ঝাউবন লাগিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হবে। যার মাধ্যম জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।

সরকার কয়েকটি ইকোপ‍ার্ক নির্মাণসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নানামুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন রক্ষায় বনজসম্পদ আহরণ সীমিত করা হয়েছে। আমরা গড়াই নদী খনন করেছি। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যার বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।

ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর সুরক্ষায় পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ট্যানারি মালিকরা নানা ছল-চাতুরি শুরু করেছে। তাদের উচিত দ্রুত তাদের ট্যানারি এলাকা সরকারের নির্ধারিত শিল্পনগরী সাভারে স্থানান্তর করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বন্যা শুরু হয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলে। এটা এদেশের পরিবেশে খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এটা যেমন ক্ষতি করে, তেমনি আবার পলি মাটি রেখে গিয়ে উপকারও করে।

তবে তিনি বন্যায় দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা সমাজিক বনায়নের জন্য এ বছর পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই পুরস্কার যেন আরও বেশি করে দেওয়‍া যায়, সেই ব্যবস্থা করা হবে। আসুন সবুজ-শ্যামল এই বাংলার মাটি কাজে লাগাই।

বক্তৃতা শেষে প্রধানমন্ত্রী কেআইবি প্রাঙ্গণে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেন।

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং বন ও পরিবেশ অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top