সকল মেনু

এশিয়ার মধ্যে হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এগিয়ে

ঢাকা: চলতি বছরের হজ কার্যক্রমের উদ্বোধনী বক্তব্যে হজ প্রত্যাশীদের কাছে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য দোয়া চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (০৩ আগস্ট) আশকোনায় হাজি ক্যাম্পে হজযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও হজ কার্যক্রম-২০১৬ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

পবিত্র কাবা শরীফে যারা হজ পালনের উদ্দেশে যাচ্ছেন, তাদের জন্য শুভকামনা জানিয়ে প্রথানমন্ত্রী বলেন, আপনার যে নিয়তে যাচ্ছেন, সেখান থেকে সুস্থ্যভাবে হজ পালন করে আবার দেশের মাটিতে ফিরে আসবেন। আর অবশ্যই আমাদের জন্য, দেশের ও দেশের মানুষের জন্য দোয়া করবেন সেটাই আমাদের কামনা।

আগস্ট শোকের মাস। এ মাসে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আর এ স্বাধীনতা পেয়েছি বলেই আজকে আমরা ১ লক্ষ এক হাজার ৭৫৮ জন হজ করতে পাঠাতে পারছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ এ আমার পরিবারকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। শুধু আমি এবং আমার বোন বিদেশের মাটিতে থাকার কারণে বেঁচে যাই। তাছাড়া আমাদের পরিবারের সব সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বাংলাদেশ থেকে হাজিদের সৌদি আরব যাওয়া জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেজন্য একটি জাহাজও ক্রয় করেছিলেন, তখন জাহাজে হজে যাওয়া যেত। এ ব্যাপারে সৌদি সরকার আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছিলেন।

এছাড়া জাতির পিতার নেতৃত্বেই আমরা ইসালামিক সম্মেলন-ওআইসি’র সদস্যপদ লাভ করি। হজের মধ্যমে বিভিন্ন মুসলিম দেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেন। ইসলাম ধর্মকে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছানোর তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন করেছিলেন এবং মাদ্রাসাবোর্ড তিনি প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গিয়েছিলেন। বায়তুল মোকারমের জন্য ও তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা দেন।

রেডিও-টেলিভিশন শুরুর সময় পবিত্র কোরআন তেলওয়াত সেটাও তিনি বাস্তবায়ন করেন।

সৌদি সরকারের আর্থিক সহায়তায় বায়তুল মোকারমের উন্নয়নের কাজ করে আওয়ামী লীগ সরকার কার্যক্রম শুরু করে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে বায়তুল মোকারমের উন্নয়নের কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০০৮ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে আবার উন্নয়নের কাজ শুরু করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজ ব্যবস্থা যাতে উন্নত হয় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন আমরা হজযাত্রীদের নিয়ে অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি। মক্কা ও মদিনা শরীফে বাসের ব্যবস্থা, অবাসনের ব্যবস্থা নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পাঁচ বছর মেয়াদী জাতীয় হজ নীতি-২০১৬ প্রণয়ন করেছি। সারা দেশে আমাদের ৫ হাজার ৭২৫টি ডিজিটাল ইউনিয়র কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি ডিজিটাল কেন্দ্র থেকে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করেছি। আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি। সেজন্য পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেছি। যারা রেজিস্ট্রেশন করেও এবার যেতে পারছেন না তারা আগামীবার অগ্রধিকার পারে। আর কেউ যেন হজের নামে অবৈধভাব সেখানে থেকে না যায় সেটাও নিশ্চিত করেছি।

হজ সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য একটা ওয়েব পোর্টাল করা আছে। সেখানে ক্লিক করেই হজের সব তথ্য পাবেন। মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে হজ সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে। সৌদি সরকার ই-হজ ব্যবস্থা চালু করেছে। তার সঙ্গে আমাদের সব ব্যবস্থা রয়েছে।

আগে হাজিদের অনেক কষ্ট করতে হতো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, হাজিদের সুবিধার জন্য টার্মিনালেও অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন সেই কষ্ট নেই। আমরা হজ প্লাজা স্থাপনের মাধ্যমে কষ্ট লাঘব করেছি।

এজন্য সৌদি বাদশা এবং সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি প্রধানমন্ত্রী।

হাজিদের সংখ্যা বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখান তেকে বেশি লোক হজ করতে যেতে চান। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ থেকে হজ করতে গিয়েছিল ৪৭ হাজার ৯৮৩ জন, আর ২০১৬ যাচ্ছে ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন। এটা আল্লাহর রহমতে বিশাল সংখ্যা। এ ব্যাপারে সৌদি সরকারের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।

হজ ব্যবস্থাপনায় আমরা যথেষ্ট উন্নতি করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে এশিয়ার মধ্যে হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে। এজন্য সৌদি হজ মন্ত্রণালয় প্রশংসাও করেছেন। ২০১৪ সালে আমারা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য স্বীকৃতিও পেয়েছি

তিনি বলেন, যারা ধর্মের নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে তারা কোনোভাবেই ভালো কাজ করছে না। তারা ইসলাম ধর্মের নামে ভীতি সৃষ্টি করছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এ ধর্মের মান-সম্মান সমুন্নত রাখতে হবে।

বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশে। এখানে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের কোনো ঠাঁই হবে না বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী।

আপনার দেশের জন্য দোয়া করবেন, দেশের মানুষের জন্য দোয়া করবেন। যে আকাঙক্ষা নিয়ে জাতির পিতা দেশকে স্বাধীন করেছিলেন সেজন্য ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। সে জন্য সবার দোয়া চাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top