সকল মেনু

রিভিউ খারিজ, বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হবে

ঢাকা: বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবন ভাঙতে আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ চেয়ে করা আবেদন খারিজ করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

তবে বৃহস্পতিবারের (০৯ মার্চ) মধ্যে বিজিএমইএ একটি আবেদন করতে হবে, যাতে ভবন ভাঙতে কত সময় লাগবে তা উল্লেখ করতে হবে। ওইদিন সময় আবেদনের ওপর আদেশ দেবেন আপিল বিভাগ।

রোববার (০৫ মার্চ) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রাজউকের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিজিএমইএ এর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ভবন ভাঙার রায় বহাল রেখে রিভিউ খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, এর সঙ্গে রফতানি বাণিজ্য জড়িত। ফলে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে তিন বছরের সময় আবেদন করেছিলো, আমরাও গুরুত্ব বিবেচনায় এক বছরের সময় চেয়েছিলাম। আদালত বিজিএমইএ কে বলেছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে লিখিতভাবে আবেদন জানানোর জন্য। ওই দিন আদালত সময়ের বিষয়ে আদেশ দেবেন।

এর আগে শুনানির জন্য সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি ) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ ২ মার্চ শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছিলেন।

কিন্তু ২ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ ‘নট টু ডে’ (আজকে নয়) আদেশ দেন। ফলে রোববার বিষয়টি শুনানির জন্য আসে।

বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় গত বছরের ২ জুন বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ।

পরে ৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৫ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশিত হয়। রায়টির লেখক ছিলেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। আর বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা তাতে একমত পোষণ করেছেন।

পরে ডিসেম্বরে এ রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। রায় প্রকাশের পর হাইকোর্টে এ মামলার অ্যামিকাস কিউরি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বাংলানিউজকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়েছি। তিনি বলেন, রায়ে আদালত কয়েকটি কারণ বলেছেন, তা হলো-২০০১ সালে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো বিজিএমইএকে এ জমি দিয়েছেন। কিন্তু তখন তাদের (রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো) মালিকানা ছিল না। সুতরাং এটা অবৈধ।

ওই জমিটি ডোবা হিসেবে খতিয়ানে আছে। কিন্তু এটাকে ভরাট করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এটাও অবৈধ। ভবন বানাতে পরিবেশের অবস্থানগত ছাড়পত্র নিয়েছে বিজিএমইএ। কিন্তু এটা ভবন নির্মাণে নয়, কারখানার ক্ষেত্রে।

১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে বিজিএমইএ ভবনটি তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে।

রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ান বাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর ইংরেজি দৈনিক ‘নিউ এজ’ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিনই প্রতিবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনির উদ্দিন আদালতে উপস্থাপন করেন।

পরদিন ৩ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তার কারণ জানতে চেয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানিতে আদালতকে আইনি সহায়তা দিতে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সাতজন আইনজীবীকে আদালত বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরি) নিয়োগ দেওয়া হয়।

ওই সাত আইনজীবী হলেন- বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ড. আখতার ইমাম, ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন, অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ও পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ তার রায়ে বিজিএমইএ’র ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি ভাঙতে বলা হয়। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের আপিলবিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো বাড়ান।

এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলে ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প’।

আদালত বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে তাদের টাকা তাদের দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে ফেরত দিতেও বলেন।

হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। যেটা চলতি বছরের ২ জনু খারিজ হয়ে যায়। এখন বিজিএমই আবার এ রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top