সকল মেনু

বৃষ্টিতে পটুয়াখালীর রবিশস্য পানির নিচে

পটুয়াখালী  :পটুয়াখালীতে গত তিন-চার দিনের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় মুগডাল, তরমুজ, মরিচসহ অন্তত ১০ জাতের রবিশস্য পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
পানি নিষ্কাশন না করতে পারায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে শত-শত কৃষক পরিবার। এর আগে গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে টানা তিন-চার দিনের ভারী বর্ষণের কারণে চলতি রবি মৌসুমে প্রথম দফা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ অঞ্চলের একাধিক কৃষক পরিবার।

প্রথম দফা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিনষ্ট হওয়ার পরে যে টুকু রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল, তা দ্বিতীয় দফায় বৃষ্টির কারণে কৃষকের ফলানো সব রবিশস্য নষ্ট হয়েছে বলে জানান একাধিক কৃষক। চলতি রবি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও শেষ দিকে কৃষকের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে এই বজ্রবৃষ্টির কারণে। প্রথম দফায় অধিকাংশ কৃষক খেত থেকে তরমুজ ও আলু উত্তলোন করলেও দ্বিতীয় দফা অকাল বর্ষণের ফলে মুগডাল, ফেলন ডাল, মরিচ, বাদাম, মিষ্টি আলু, আলুসহ অন্তত ১০ জাতের রবিশস্য চাষিরা এবার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার আটটি উপজেলায় এ বছর ৪৫০ হেক্টর জমিতে গম, ১ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে আলু, ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু, ২৩০ হেক্টর জমিতে আখ, ৪৫০ হেক্টর জমিতে ভূট্টা, ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি, ১৮ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ, ১ হাজার হেক্টর জমিতে বাঙ্গি (ফুটি), ১ হাজার হেক্টর জমিতে খিরা, ৩০৫ হেক্টর জমিতে শসা, ৪৮২ হেক্টর জমিতে সরিষা, ৫ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম, ২৫০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী, ও ২ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে তিল, ১৭০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ, ৩৪২ হেক্টর জমিতে রসুন, ৮ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে মরিচ, ৪৯৫ হেক্টর জমিতে ধনিয়া, ২৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে খেসারি, ৮২ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে মুগ, ৭৫০ হেক্টর জমিতে মশুর ডাল, ১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে ছোলা ডাল, ১৭০ হেক্টর জমিতে মাস কলাই এবং ৬ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে ফেলন ডালের আবাদ করা হয়েছে। চলতি রবি মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রবিশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষক ও কৃষি দপ্তরের ধারণা ছিল। কিন্তু মার্চ মাসের প্রথম দিকের বৃষ্টিপাতের কারণে এবং এপ্রিলের শেষ দিকে অকাল বৃষ্টিপাতের কারণে দ্বিতীয় দফা ক্ষতির শিকার হন এ জেলার কৃষকেরা। দ্বিতীয় দফা বজ্রবৃষ্টির কারণে রবিশস্য আবাদ করা কৃষকেরা এবার সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন।
বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক আলকাস মোল্লা জানান, এপ্রিলের প্রথম দিকে জোয়ারে পানিতে তলিয়ে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির মুগডাল নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যান্য রবিশস্য তো আছেই। এবার বজ্রবৃষ্টির কারণে যেটুকু বাকি ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। এ বছর এ ইউনিয়ন থেকে অন্তত ৯০ হাজার মণ মুগডাল উৎপাদন হতো বলে আমাদের ধারণা ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় দফা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার ফসল ক্ষতি হয়েছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলার পূর্ববাহেরচর এলাকার কৃষক মো. কায়ুম, রাহাত মিয়া, অহিদুল ফকির ও মো. আমীর হোসেন জানান, গত মার্চ মাসের প্রথম দিকে এবং এপ্রিল মাসের শেষ দিকে হওয়া টানা বর্ষণে তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখনো খেত থেকে মুগ ডাল, ফেলন ডাল, আলু, মিষ্টি আলু, তরমুজ, বাঙ্গি, গম, সূর্যমুখী, বাদাম, মরিচসহ অন্তত ১০ জাতের রবিশস্য উত্তলোন করা হয়নি। তার আগেই অকাল বৃষ্টিপাতের কারণে খেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে তাদের সব রবিশস্য নষ্ট হয়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর এ জেলায় রবিশস্যের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কৃষক অনেক প্রজাতের রবিশস্য পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছে। তবে টাকার অঙ্কে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার পরিসংখ্যান না করে বলা যাবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top