সকল মেনু

ম্যালেরিয়া নিরাময়যোগ্য

ম্যালেরিয়া রোগ যেমন চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময়যোগ্য, তেমনি অগ্রিম ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করাও সম্ভব।বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস আজ। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘চিরদিনের জন্য ম্যালেরিয়া নির্মূল করুন।’

ম্যালেরিয়া মশাবাহিত একটি সংক্রামক রোগ। বিশ্বের অনেক দেশেই এখনো এটি ঘাতক রোগ হিসেবে পরিচিত। ম্যালেরিয়ার সাধারণ লক্ষণ হল শীত লাগা এবং কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। এটা বড়দের মধ্যেই অধিকহারে দেখা যায়। বাচ্চাদের অনেক সময় জ্বরের সঙ্গে পেটের গোলমাল, শ্বাসজনিত অসুবিধা ইত্যাদি দেখা যায়। ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা ভাবটি লক্ষ্য করা যায় না। এর পরিবর্তে খিটখিটে ভাব, ঝিমুনি, খাওয়ার অনীহা, বমি, মাথাব্যথা, খুব বেশি জ্বর এসব দেখা দিয়ে থাকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মুনতাসীর মারুফ এর পরামর্শ- ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিরোধের জন্য এর জীবাণু বহনকারী মশার কামড় থেকে বাঁচতে হবে। এ জন্য ঘরে বিশেষত রাতে মশারির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অ্যানোফিলিস জাতীয় মশা সাধারণত রাতেই কামড়ায়। ম্যালেরিয়ার প্রকোপ যেসব অঞ্চলে বেশি, সেখানে কীটনাশক-সিক্ত মশারি টানিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেয়া হয়। সন্ধ্যার পর মশা-নিবারক কয়েল, ম্যাট বা এরোসল ব্যবহার করতে হবে। ঝোপ-ঝাড়, ডোবা, নর্দমা, ছোট নালাসহ মশার বংশবৃদ্ধির জন্য উপযোগী স্থানগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। এসব স্থানে নিয়মিত মশা-নিবারক কীটনাশক ছড়ানো যেতে পারে। ম্যালেরিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ভ্রমণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন এবং মারা যাচ্ছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এর অধিকাংশই শিশু। ম্যালেরিয়ার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হচ্ছে আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের দেশগুলো। এছাড়া এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এমন কি ইউরোপের কয়েকটি দেশেও ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা যায় বাংলাদেশেও। এক পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৩.৬ শতাংশের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। দেশের ১৩টি জেলার ৭০টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। এই ১৩ জেলার মধ্যে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ম্যালেরিয়া-জনিত মৃত্যুহার সর্বাধিক।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে ৯৭টি দেশ ও অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব সর্বাধিক। সীমান্তবর্তী ১৩টি জেলার মধ্যে রয়েছে-রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কুড়িগ্রাম। তবে এর মধ্যে শুধুমাত্র রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান-এই তিন জেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তের মোট ৯৩ শতাংশ ঘটে থাকে।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনএমসিপি) কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান জানান, ২০১৪ সালে দেশে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের ঘটনার সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৪৮০, ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৭১৯ এবং ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার ৭৩৭।

তিনি বলেন, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও দৃঢ় অঙ্গীকারের ফলে গত কয়েক বছরে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের ঘটনা লক্ষ্যণীয়ভাবে কমে এসেছে। যদি এই (ম্যালেরিয়া) হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ আমরা দেশকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করতে সক্ষম হবো।

অন্যান্য বছরের মতো এবারও বাংলাদেশে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হবে। এ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ম্যালেরিয়াপ্রবণ ১৩ জেলা এবং ৭০ উপজেলার ৬২০টি ইউনিয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top