সকল মেনু

অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে শিক্ষার্থীদের

সময়কণ্ঠ প্রতিবেদক : একাদশ শ্রেণির বই ছাপাতে সরকারের অতিরিক্ত গচ্চা যাচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সাহিত্য, বাংলা সহপাঠ (উপন্যাস ও নাটক) এবং ইংরেজি প্রথমপত্র (ইংলিশ ফর টুডে)-এ তিনটি বই প্রকাশনা ও মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের দিয়ে ছাপানো হয়। কিন্তু এবার প্রাক্কলিত দরের সঙ্গে বাজারের কাগজসহ অন্যান্য কাঁচামালের সামঞ্জস্য না থাকায় কেউ টেন্ডারে অংশ নেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে এনসিটিবি প্রত্যেক বইয়ের বর্তমানের দরের ওপর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করে কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ২৪ লাখ বই ছাপাতে অতিরিক্ত খরচ হবে ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। পুরো টাকাই যাবে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের পকেট থেকে। ২৪ লটে ২৪ লাখ বইয়ের মধ্যে প্রথম দফায় ১৭টি লটে মোট ১৯ লাখ ৮৯ হাজার বই ছাপা হবে। পরবর্তীতে বাকি বই ছাপার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে দুই দফায় ১৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধি বিষয়টি বহাল থাকবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইংরেজি প্রথমপত্র ১৫ শতাংশ বাড়তি দামের পর দাম পড়বে ৯৩ টাকা। বর্তমানের এটির দাম ৮১ টাকা। একই ভাবে বাংলা সহপাঠ বইয়ের বর্তমান দাম ৫৫ টাকা বাড়তি দামের পর এটি হবে ৬৩ টাকা এবং বাংলা সাহিত্যের ১১৩ টাকার বইয়ের বাড়তি দামে কিনতে হবে ১৩০ টাকায়। তিনটি বইয়ের মোট দাম বেড়েছে ৪১ টাকা। তবে এনসিটিবি এই ছাপাতে ১১ শতাংশের যে রয়েলিটি (সম্মানী) পায় সেটি কমানোর দাবি করলের তা করা হয়নি। এ ব্যাপারে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, এটি মিটমাট হয়েছে। ১লা জুলাইয়ের মধ্যে বই পেতে এখন আর কোনো বাধা রইল না। তিনি বলেন, বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটু দাম বাড়াতে হয়েছে। তবে সেটি সবার নাগালের মধ্যেই। এনসিটিবির সূত্রে জানা গেছে, একাদশ শ্রেণির ৩০টি বইয়ের মধ্যে এ তিনটি বই এনসিটিবি প্রকাশক ও মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের দিয়ে ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। এতে প্রকাশকদের কাছ থেকে ১১ শতাংশ রয়েলিটি পায় এনসিটিবি। এবার ২৪টি লটে মোট ২৪ লাখ বই ছাপার জন্য গত ১৬ই এপ্রিল টেন্ডার আহ্বান করে এনসিটিবি। এতে দরপত্র বিক্রি হয় ৮৭টি। মে মাসের ৩ তারিখ টেন্ডার খোলার পর রীতিমত ‘থ’ হয়ে যায় কর্মকর্তারা। একটি প্রতিষ্ঠানও এতে অংশ নেয়নি। এরপর ব্যবসায়ী কয়েক দফা সমঝোতা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় এনসিটিবি। ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল বইয়ের দাম ২০ শতাংশ এবং রয়েলিটি ১১ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করার। পরে এনসিটিবি ১২ শতাংশ দাম বাড়ানো প্রস্তাব দিলেও তাতে রাজি হয়নি ব্যবসায়ীরা। পরে বাধ্য হয়ে ১৫ শতাংশ করতে রাজি হয় এনসিটিবি। শিগগিরই প্রকাশক ও মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের কাজের সম্মতিপত্র দেয়া হবে বলে জানা গেছে। মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এনসিটিবি গত বছরের চেয়ে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা বেশি দামে কাগজ কিনেছে। সেখানে গত বছরের দামে আমাদের বই ছাপানোর জন্য প্রাক্কলন ধরেছে। এটা হতে পারে না। আমাদের দাবি ছিল বইয়ের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো, রয়েলিটি কমানো এবং বইয়ের পরিমাণ কমানো। আমরা শুনেছি, এ ধরনের প্রস্তাব আসছে। তবে কাজ করার সম্মতিপত্র এখনও দেয়া হয়নি। যদি ১৫ শতাংশ বাড়তি দাম এবং ১৭ লট করা হয় তবে আমরা কাজ করতে প্রস্তুত। কর্মকর্তারা জানান, প্রথম দফায় ১৭টি লটের মোট ১৯ লাখ ৮৯ হাজার বই ছাপানো হবে। এতে ইংরেজি প্রথমপত্র ও বাংলা সাহিত্যে প্রতি লটে ৪০ হাজার ৫০০ এবং বাংলা সহপাঠে প্রতি লটে ৩৬ হাজার বই ছাপানো হবে। প্রথম দফায় বই বাজারে বিক্রি করার পর দ্বিতীয় দফায় বাকি কাজ করার সম্মতিপত্র দেয়া হবে। এনসিটিবি’র কর্মকর্তারা বলেন, এ প্রথম সরকারি কাজের টেন্ডারে কোনো প্রতিষ্ঠান অংশ না নেয়ার নজির তৈরি হয়েছে। সদ্য পাস করা এসএসসি শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণির ভর্তির পর ১লা জুলাই শিক্ষার্থীদের হাতে তিনটি বই তুলে দেয় সরকার। এবার বই নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল সমঝোতার মাধ্যমে হওয়ার এ পক্রিয়ার পর ১লা জুলাই বই তুলে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৩ সাল পর্যন্ত এনসিটিবি নিজেই এসব বই বাজারজাত করতো। এতে প্রতি বছর লোকসানের কারণে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে অফারিং পদ্ধতিতে ১৭ জন প্রকাশকের মাধ্যমে বাজারজাত শুরু করে। গত বছর প্রকাশকদের ছাপে ১৫% দাম পর্যন্ত বাড়ায়। এবার কোনো প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ না নেয়ায় এবারও ১৫% দাম বাড়ানো হলো। এনসিটিবি প্রতি লটের জন্য ১৮-২০ লাখ টাকা রয়েলিটি পায় এনসিটিবি। এ টাকা সরকারের ফান্ডে জমা দেয়া হয় না। বিভিন্ন বোনাস, নানা খাত উপখাত দেখিয়ে এ টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top