২৫ বছরের ক্যারিয়ার
প্লাবন কোরেশীর গানে আত্মপ্রকাশ গায়ক হিসেবে, ১৯৯৩ সালে। সে বছরই গাজীপুর থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। প্রথম অ্যালবাম ‘কিছুই পাইনি’ প্রকাশ করেন সুর-ছন্দ থেকে। পরের ছয়-সাত বছরে বের করেন নিজের গাওয়া আরো তিনটি অ্যালবাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংগীতা থেকে ‘কষ্টে আছে আইজউদ্দিন’ ও ‘সাপলুডু’। প্লাবন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে থাকব। গান গাইব, লিখব, সুর করব। তাই এইচএসসি শেষ করেই ঢাকায় চলে আসি। গাওয়ার পাশাপাশি শুরু থেকেই অন্যদের জন্য লিখছি, সুর করছি। শিল্পী হিসেবে সেভাবে পরিচিত হতে না পারায় অনেকেই মনে করেন আমি শুধু গীতিকার-সুরকার। আমার সময় যে ধরনের গান হচ্ছিল, এর বাইরে গিয়ে কিছু করতে চেয়েছি। সে জন্যই হয়তো গায়ক হিসেবে তখন নাম করতে পারিনি।’
দেড় হাজার গান
গত ২৫ বছরে লেখা, সুর করা ও গাওয়া মিলিয়ে প্লাবন কোরেশীর প্রায় দেড় হাজার গান প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদের গাওয়াই বেশি। অন্যদের জন্য লেখা ও সুর করা শুরু ঝর্না রহমানের ‘ও রসিয়া বন্ধুয়া’ অ্যালবাম দিয়ে। এরপর বিভিন্ন সময়ে গান করেছেন এন্ড্রু কিশোর, মমতাজ, রবি চৌধুরী, মনি কিশোর, বেবী নাজনীন, ডলি সায়ন্তনী, শাহনাজ বেলীসহ দেশের অনেক জনপ্রিয় শিল্পীর জন্য। ‘গান প্রকাশ হতে হতে চারদিকে গীতিকার-সুরকার হিসেবে আমার পরিচিতি বাড়তে থাকে। কাজও পেতে থাকি একের পর এক। যখন যে শিল্পীর কাজ করেছি, চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দিতে। আমার লেখা অনেক লোকগানই মানুষের কাছে পৌঁছেছে। সে জন্য অনেকের ধারণা, আমি লোকগানই করি। ব্যাপারটা তেমন নয়। লোকগানের প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা-ভালোবাসা আছে এটা ঠিক, কিন্তু আধুনিক, ক্লাসিক্যাল ও ভিন্ন আঙ্গিকের গানও করেছি অনেক।’
মানুষের মুখে মুখে
সম্প্রতি ‘সারেগামাপা’য় প্লাবনের সুর করা, দেলোয়ার আরজুদা শরফের লেখা এবং ফজলুর রহমান বাবুর গাওয়া ‘ইন্দুবালা’ আলোচিত হয় শম্পা বিশ্বাসের গাওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর অনেকেই প্লাবনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত প্লাবন, ‘নিজের গান যখন আরেকটি দেশের কোনো প্রতিযোগিতায় বাজে, তখন অবশ্যই একটা ভালো লাগা কাজ করে। তার চেয়েও বড় কথা, এটা এক ধরনের অনুপ্রেরণা, যা এর কারিগরকে আরো ভালো কাজ করার তাড়না দেয়।’ প্লাবনের করা জনপ্রিয় গানের মধ্যে আরো রয়েছেÍরবি চৌধুরীর ‘রঙের বন্ধু’, মনির খানের ‘মুখ দেখে কি মানুষ চেনা যায়’, সালমার ‘ভুলে যদি আর কোনো দিন’, ধ্রুব গুহর ‘যে পাখি ঘর বোঝে না’ ও ‘একলা পাখি’, দিলরুবা খানের ‘তোমার আমার দুই মেরুতে বাস’, রিংকুর ‘বিবাগী’, মমতাজের ‘মনগাড়ি’, শাহনাজ বেলীর ‘শীতের বাতাস’ প্রভৃতি।
গত এক বছর
ক্যাসেট ও সিডি যুগে দাপটের সঙ্গে কাজ করার পর ইউটিউব জামানায়ও থেমে নেই প্লাবন কোরেশী। গত এক বছরে বেশ কিছু সিঙ্গল উপহার দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে আসিফের ‘কসম’, ‘দিল দিওয়ানা দিল’ ও ‘ডুবো প্রেম’, মমতাজের ‘আমি যদি না পাই তোমায়’, শফিক তুহিনের ‘অন্তরাত্মা’, সালমার ‘আয় ফিরে আয়’, এফ এ সুমনের ‘কালো প্রজাপতি’ ও ‘ঝুল বারান্দা’, ইমন খানের ‘পরী’ ও ‘সম্পর্ক’, কাজী শুভর ‘আই লাভ ইউ জান’ ও ‘তুমি বড় বেঈমান’ সানি আজাদ’র ‘আধাঁর’, প্রভৃতি। ‘এখন গান শোনার বড় মাধ্যম ইউটিউব। এখানে অডিওর চেয়ে ভিডিওর প্রতি মানুষের ঝোঁক। দুটি বিষয় মাথায় রেখেই এ গানগুলো বানিয়েছি। শ্রোতাদের কাছ থেকে ভালো রেসপন্সও পাচ্ছি’Íবলছিলেন প্লাবন।
প্রকাশের অপেক্ষায়
প্লাবন এখন ব্যস্ত নতুন গান তৈরিতে। তাঁর করা যে গানগুলো প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বেবী নাজনীনের ‘চিত্রনাট্য’, ‘হসন্ত বসন্ত’, আসিফ আকবরের ‘বুলবুলি’, শানের ‘চারপোকার সংসার’ এবং ধ্রুব গুহ, আকাশ সেন প্রমুখর গান। ‘ইন্দুবালা’ চলচ্চিত্রে প্লাবনের সুরে দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফকির সাহাবউদ্দিন ও বেলাল খান। ‘মায়া : দ্য লাস্ট মাদার’ ছবিতে মমতাজের ‘ডালিম গাছ’-এর সুরও প্লাবনের। সারা দিন গান নিয়ে পড়ে থাকেন বলে কাছের বন্ধুরা গানচাষি নামেই ডাকে প্লাবনকে। তিনিও নামটি বেশ পছন্দ করেন, ‘নামের আগে গানচাষি যোগ করে ফেসবুকে আমার একটি পেজও আছে। গানচাষি নামে কেউ ডাকলে ভালোই লাগে। আমি তো বারো মাস গানের চাষই করি।’
লেখক হিসেবে অভিষেক
গানের বাইরে লেখালেখিরও অভ্যাস আছে প্লাবনের। নিজের লেখা কবিতা কয়েকবারই আবৃত্তি করেছেন। অন্যদের দিয়েও করিয়েছেন। আসছে একুশে বইমেলায় প্রথমবারের মতো প্রকাশ করতে যাচ্ছেন দুটি গ্রন্থ। একটি ছোটদের জন্য ‘ওরে বাপরে ভূত’, আরেকটি ছোটগল্প ‘আকাশে বায়সের ঝাঁক জমিনে সারমেয়’।-সময়কণ্ঠ প্রতিবেদক।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।