সকল মেনু

কুমিল্লায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন, ঘটনা খতিয়ে দেখার নির্দেশ

ডেস্ক : কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে জেলা শহরে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে তাদের মোতায়েন করা হয়। এদিকে এ ঘটনায় সেখানে সত্যি কী ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এদিন সকালে কুমিল্লায় একটি মন্দিরকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে তারাও তোপের মুখে পড়েন। বাঁধে সংঘর্ষ।

এরপর দুপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। বিজিবির কুমিল্লা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফজলে রাব্বি বলেন, কুমিল্লায় যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।দুপুরের পর পরিস্থিতি শান্ত হলেও এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পুলিশের কর্মকর্তাদের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে দুর্গাপূজার মধ্যে এই ঘটনার পর বিকালে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধও জানিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় এক জরুরি ঘোষণায় বলেছে, কুমিল্লায় পবিত্র কুরআন অবমাননা সংক্রান্ত খবর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খবরটি খতিয়ে দেখার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই ঘোষণায় আরও বলা হয়, ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে যে কেউ এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকুক, তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইন হাতে তুলে না নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এদিকে কুমিল্লার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, কক্সবাজারের পেকুয়ায় মন্দির এবং নোয়াখালীতে একাধিক পূজা মন্ডপে হামলার খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লায় নানুয়া দিঘীর পাড়ে পূজামণ্ডপে ঘটনার সূত্রপাত হলেও এরপর সকাল থেকে বিকাল নাগাদ আরও কয়েকটি মন্দিরে হামলা হয় বলে দাবি করেছেন কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক শিবু প্রসাদ দত্ত।
তিনি বলেন, সকাল থেকে বিকাল ৩টা নাগাদ আটটি মন্দিরকে ঘিরে ভাংচুর চালানো হয়। তার মধ্যে নানুয়ার দিঘির পাড়ের দর্পনসংঘ মন্দির ও জানময়ী কালীবাড়িতে মূর্তি ভাংচুর হয়। ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে জানতে চাইলে শিবু দত্ত বলেন, মন্দিরে সকালে কে বা কারা একটি কুরআন শরিফ রেখে গিয়েছিল। কেউ বলে দু’টা ভদ্রমহিলা, দারোয়ানটা নাকি ঘুমায়ে ছিল, ওই সময় ঘটছে ঘটনা। এই রকমই শোনা যাইতেছে আর কী। সেটাই ভিডিও করে সকাল ৬টার মধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওসি সাহেবকে কে বা কারা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করছে। ফোন করার পর ওসি সাহেব সাথে সাথে আসছে। তখন সাতটা, কি সাড়ে সাতটা বাজে।

পুরো ঘটনাটি ‘পরিকল্পিত’ দাবি করে এর তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন শিবু দত্ত। তিনি আরও বলেন, ‘পরিকল্পিত কেন? কারণ ৭টার সময় অনেক লোক, ওই লোকগুলো আসল কোথা থেকে, আর ওসিকে ৯৯৯ এ কে টেলিফোন করল। ওসি সাহেব অনেক চেষ্টা করছে, তখন কে বা কারা এটা ভিডিও করে ভাইরাল করে দিয়েছে।’

শিবু প্রসাদ বলেন, সকাল ৭টার পর থেকেই উত্তেজনা শুরু হলেও সাড়ে ১১টার দিকে ভাংচুরের শুরু হয়। র‌্যাব-পুলিশের অতিরিক্ত উপস্থিতিতে বিকাল ৩টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কুমিল্লাবাসীর জন্য দুর্ভাগ্য। কুমিল্লায় আমরা হিন্দু-মুসলিম সবাই ভাই ভাই হিসাবে বসবাস করে আসছি। এই ধরনের ঘটনা আমাদের এখানে কখনও হয় নাই।’

এদিকে সকালে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা ঘটনাস্থলে যান। তার মধ্যে ইট ছোড়া চলায় পুলিশ রবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। তাতে আহত হয় অনেকে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়।

কুমিল্লায় মন্দিরে হামলার নিন্দা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, অতীতে বিভিন্ন সময়ে যেমন নানা অজুহাত তৈরি করে সংখ্যালঘুদের উপর হামালা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তেমনি এবারেও পূজামণ্ডপে কুরআন শরিফ অবমাননার গুজব ছড়িয়ে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে।

বিবৃতিতে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং সারাদেশে দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নভাবে করার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি দাবি জানায় বাম জোট।

কুমিল্লার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ দিন সন্ধ্যায় তিনি বলেন, যারা হিন্দুদের মন্দিরে হামলা চালায়, তারা দলীয় পরিচয়ের হলেও ছাড় দেওয়া হবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যারা নষ্ট করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কোনো দুর্বৃত্ত যাতে মন্দিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা হামলা করতে না পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top