সকল মেনু

সমান মর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করতে চাই: প্রধানমন্ত্রী

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | সময়কন্ঠ.কম

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো বিশেষ দেশ বা জোটের দিকে না ঝুঁকে বিশ্বের সব শান্তিকামী রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা সমমর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করতে নিরলস কাজ করছি।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু, বেগম মতিয়া চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।

বঙ্গবন্ধু মেডেল ফর ডিপ্লোম্যাটিক এক্সিলেন্স দেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কূটনৈতিক মিশনের মূল কাজই হলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো। জাতির পিতা বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার মিশন গ্রহণ করেছিলেন। তিনি জনকূটনীতির ক্ষেত্রে ছিলেন একজন ‘রোল মডেল’। ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই তিনি অনুধাবন করেছিলেন- এ অঞ্চলের বাঙালিদের ওপর আরেক নতুন ঔপনিবেশিক শাসন-ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর দীর্ঘ সাড়ে ২৪ বছর জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেও তিনি তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে বোঝাতে পেরেছেন স্বাধীনতা অর্জনই মুক্তির একমাত্র পথ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে তার দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণ, ‘আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না। …এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক কূটনীতির যাত্রা শুরু হয়। তার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে পরিচালিত মুজিব নগর সরকারের ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ বাংলাদেশের প্রথম কূটনৈতিক দলিল। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করে। জাতির পিতার সফল দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক তৎপরতায় বাংলাদেশ বিশ্বের ১২৩টি দেশ এবং ১৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি লাভ করে। ইউনেস্কো তার ‘৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ’কে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছে। স্নায়ু-যুদ্ধের সময় বিশ্ব যখন দু’টি শিবিরে বিভক্ত হয়েছিল, সে সময় তিনি উচ্চারণ করেছিলেন- ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’। দু’টি ভয়াবহ বিশ্ব-যুদ্ধের পর, বিশ্ব যখন শীতল যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো, তখন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতার এ ঘোষণা এক অদম্য সাহসী নীতি হিসেবেই বিবেচিত হয়েছিল। এর মাধ্যমেই তিনি বিশ্ববাসীকে এক নতুন বিশ্ব-ব্যবস্থা বিকাশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। যেখানে সর্বজনীন মানবতাবাদ, বিশ্বভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রাধান্য পেয়েছিল। এই মতাদর্শের আলোকেই তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় তার গৃহীত নীতি বিশ্ববাসীর কাছে প্রসংশিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শান্তি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়। বিশ্ব শান্তি ও সংহতি স্থাপনে তার দর্শন ও অর্জন বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গন ছাড়িয়ে স্থান-কাল নির্বিশেষে বিশ্বের সব কূটনীতিক ও শান্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। যা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। আমরা জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করেই আমাদের কূটনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারের আমলে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে আমরা ‘ভারসাম্যের কূটনীতি’ পরিচালনা করছি। জাতির পিতার আদর্শে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীসহ সব বহুপাক্ষিক ফোরামে আমরা কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করছি। এ মাসেই ঢাকায় বিশ্বের শান্তিকামী বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ও নেতাদের অংশগ্রহণে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন’ সফলভাবে আয়োজন করেছি। সেখানে আমরা সুদূরপ্রসারী ‘ঢাকা ঘোষণা’ গ্রহণ করেছি। জাতির পিতা বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের ন্যায্য দারির সঙ্গে সর্বদাই একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। প্রতিবেশী মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকরা যখন হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, আমরা তাদের দিকে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা মিয়ানমারকে বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার এবং আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান সবারই কাম্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের কূটনীতির একটি বড় অংশই হল অর্থনৈতিক কূটনীতি। তাছাড়া- বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, বিদেশে বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ এবং দক্ষ জনসম্পদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কূটনীতিকরা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। তারা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি এমডিজি, এসডিজি, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করছেন। ভালো কূটনীতিক হতে হলে দেশপ্রেমকে গভীরভাবে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে পরিবর্তনশীল বিশ্ব-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়ে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের সরকার ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জ্ঞান-নির্ভর উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে। ইতোমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সব যোগ্যতা অর্জন করেছি। গত ১৩ বছর গড়ে ছয় শতাংশের ওপর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। উন্নয়নের সুফল সব মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ সব আর্থ-সামাজিক সূচকে আমরা ক্রমাগত উন্নতি করে চলেছি। এক সময়ের অনুদান বা ঋণ গ্রহীতা রাষ্ট্র থেকে আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহযোগী কৌশলগত অংশীদার রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করবো।

তিনি বলেন, যে দু’জন কূটনীতিক আজকের পদক বিজয়ী তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে অসাধারণ কূটনৈতিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। আমাদের অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেহরি বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে আমাদের দু’দেশ এবং জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম (অব.) দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও সুনীল অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের সরকারের আমলে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিজয়ের অভিযাত্রায় তিনি অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেহরি এবং সচিব রিয়াল অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলমকে (অব.) এই পদক প্রাপ্তির জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top