সকল মেনু

দুর্ভোগ এড়াতে আগেভাগেই বাড়ির পথে নগরবাসী

প্রতিবেদক : পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানীর বাসাবোতে বসবাস করেন সামছুল ইসলাম। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর গ্রামে বসবাস করা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারেননি তিনি। এবছর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে ঈদ উৎসবটা গ্রামেই কাটাতে চান।

সামছুল ইসলাম বলেন, মহামারির কারণে গত দুই বছর গ্রামে ঈদ করতে পারিনি। এবার করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। সে কারণে গ্রামে ঈদ করার মনস্থির করেছি। আমার মতো এমন অনেকেই এই চিন্তা-ভাবনা করেছেন। সে কারণে সড়কে যানজটসহ দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আগেভাগেই পরিবার পরিজনকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সামছুল ইসলামের মতো একই ভাবনা মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আবু হায়াতের। তবে তার ভয় ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে বাড়তি দুর্ভোগের কথা ভেবে। এজন্য ঈদযাত্রার চাপ বাড়ার আগেই বাড়ি পৌঁছার প্রস্তুতি তার। এরই মধ্যে পরিবারের একটি অংশ পাঠিয়ে দিয়েছেন বাড়িতে। সামছুল ইসলাম ও আবু হায়াতের মতো এমন শত শত নগরবাসী ঈদযাত্রার চাপ বাড়ার আগেই বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরই মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।

দুর্ভোগ এড়াতে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরাও নগরবাসীকে একই রকম পরামর্শ দিচ্ছেন। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ধরে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঈদ উদযাপন করতে পারেনি নগরবাসী। এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন অনেকেই। কিন্তু তার মধ্যেই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে সড়কের পুরানো সেই দুর্ভোগ। আর এজন্যই যানজট ও ভাঙা সড়কের দুর্ভোগ এড়াতে আগেভাগেই বাড়ির পথে রওনা দিচ্ছেন অনেকে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ বছরও ঈদযাত্রায় মহাসড়কে দুর্ভোগ সহ্য করতে হবে। অধিকাংশ সড়কে খানাখন্দ রয়েছে। তাছাড়া প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় তীব্র যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ সিরাজগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কাঁচপুর সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু ও শিমুলিয়া ফেরিঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে। যাত্রাপথে দুর্ভোগের দুঃশ্চিন্তায় নগরবাসীর অনেকেই পরিবার-পরিজনকে আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ কমাতে উদ্যোগী কর্তৃপক্ষও। এ জন্য দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, সড়কে দুর্ভোগ কমাতে সব দিকে নজর রাখা হচ্ছে। সড়কে যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে সেগুলো শেষ করে ঈদের আগে খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে না সেগুলোর কাজ বন্ধ রাখা হবে। এবারের ঈদযাত্রায় রাজধানীবাসী যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংগঠনটি জানিয়েছে, রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলোতে বেশি দুর্ভোগ হবে। এরমধ্যে যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, বাবুবাজার ব্রিজ, পোস্তগোলা, টঙ্গী রেলস্টেশন, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু, মীরের বাজার, উলুখোলা, কাঞ্চন ব্রিজ, গাবতলী মাজার রোড, মীরের ধৌর, আশুলিয়া, ইপিজেড, চন্দ্রা, রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু, জিঞ্জিরা, কেরানীগঞ্জ, হাতিরঝিল, মহাখালী, রামপুরা, শেখের জায়গা, আমুলিয়া, ডেমরা, সুলতানা কামাল ব্রিজ, চিটাগাং রোড, কাঁচপুর, মদনপুর, মেঘনা টোল প্লাজা, ভুলতা, গাউছিয়া, বরফা অন্যতম। অন্যদিকে, বিআরটি’র নির্মাণাধীন প্রকল্পের কারণে উত্তরা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যাতায়াতে মানুষজনকে অসহনীয় যানজটে পড়তে হবে। এ ছাড়া দেশের ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, শিমুলিয়া ঘাট, বঙ্গবন্ধু, নলকা ও কাঁচপুর সেতুতে ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে সড়কে দুর্ঘটনা ও ভোগান্তি এড়াতে বুয়েটের অধ্যক্ষ ও দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ড. মোহম্মদ হাদিউজ্জামান নগরবাসীকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ঈদে গড়ে দৈনিক যাতায়াত করা ৩০ লাখ যাত্রীর মধ্যে বাসে ৮ লাখ, ট্রেনে ১ লাখ, লঞ্চে দেড় লাখ, ব্যক্তিগত গাড়িতে চার লাখ ও বাইক রাইড করে চার লাখ লোক ঢাকা ছাড়বেন। বাকি ১৫ লাখ লোক ঝুঁকি নিয়ে কভার্ড ভ্যান, ট্রেনের ছাদসহ বিভিন্ন উপায়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর স্কুল-কলেজগুলো ২০ রোজার পর বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে পরিবারের কিছু সদস্য আগেই গ্রামের উদ্দেশে যেতে পারে। অফিসের কাজের জন্য যারা ২৭ রোজার আগে যেতে পারবেন না, তারা পরে গেলেও যাতায়াতে ঝুঁকি এবং চাপ কম পড়বে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top