ডেস্ক : লোকসান শঙ্কায় চাল আমদানিতে আগ্রহী হচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। কারণ ডলারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় আমদানি করা চাল বাজারজাত করা পর্যন্ত যে খরচ পড়বে, তা স্থানীয় বাজারের দামের চেয়েও বেশি পড়বে। ফলে আমদানি করলে ব্যবসায়ীদের লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হবে। এ কারণে চাল আমদানিতে ব্যবসায়ীরা কম আগ্রহী হচ্ছে।
এদিকে সরকার চালের দাম স্থিতিশীল রাখতেই শুল্ক কমানোর পর চার ধাপে ৩ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৯ লাখ টনের বেশি আমদানির অনুমতি দিয়েছে। প্রথম দফায় অনুমতি দেয়ার পর ইতোমধ্যে দুই সপ্তাহ পার হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চাল আমদানি হয়নি। আমদানিকারক এবং খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, ভরা মৌসুমেও এবার চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এমন অবস্থায় সরকার বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম স্থিতিশীল রাখতে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়। আর ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ২৩ জুন চাল আমদানিতে শুল্ক ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে সরকার ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে প্রয়োজনে তার পরিমাণ আরও বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে চার দফায় ৩২৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৯ লাখ ১০ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৩০ জুন প্রথম দফায় ৪ লাখ ৯ হাজার টন আমদানির জন্য ৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়। তখন খাদ্য মন্ত্রণালয় বলেছিল ২১ জুলাইয়ের মধ্যেএলসি খুলতে হবে এবং ১১ আগস্টের মধ্যে আমদানি করা চাল বাজারজাত করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশে এক টনও আমদানি করা হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেই বেসরকারিভাবে আমদানিকৃত চালের ৮০ শতাংশের বেশি আসে। তবে পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড থেকে চাল আনার সুযোগ থাকলেও পরিবহন ব্যয় ও সময় বেশি লাগে। ওই কারণেই আমদানিকারকদের পছন্দের তালিকায় প্রথম থাকে ভারত। ভারত থেকে এক সপ্তাহে চাল আমদানি করা সম্ভব।
বর্তমানে ভারত থেকে বিআর-২৮ জাতের চাল আমদানি করলে প্রতি টনের দাম পড়বে ৪৩০ থেকে ৪৩৫ ডলার। কিন্তু এলসি খুলতে গেলে এক ডলারের বিপরীতে ৯৮ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এই হিসাবে এক টন চালের দাম দাঁড়াচ্ছে ৪২ হাজার ১৪০ থেকে ৪২ হাজার ৬৩০ টাকা। চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এলসি প্রক্রিয়াকরণসহ অন্যান্য খরচ মিলে যা প্রায় ২৭ শতাংশে দাঁড়ায়। সব মিলিয়ে দেশে আসা পর্যন্ত প্রতি কেজি চালের খরচ পড়বে ৫৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৫৪ টাকা।কিন্তু একই চাল দেশের মিলগেটে ৪৮ থেকে ৪৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ওই হিসাবে আমদানি করা চালের কেজিতে খরচ পড়বে মিলগেটের চেয়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকা বেশি। ফলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমদানিকারকদের থেকে চাল না কিনে মিল থেকে কিনবে। আর ওই কারণেই চাল আমদানির অনুমতি নিয়ে রাখলেও অনেকেই আমদানিতে আগ্রহী নয়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শহিদুর রহমান পাটওয়ারী জানান, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিকারকরা সঙ্কটে পড়েছেন। আর বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কাওসার আলম খান জানান, বাংলাদেশ চাল আমদানি করবে এমন তথ্য পেয়ে ভারতের রপ্তানিকারকরা কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা দাম বেশি চাচ্ছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের (সরবরাহ ও সংগ্রহ অনুবিভাগের) অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কেউ চাল আমদানি করেছে বলে জানা যায়নি। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এলসি খোলা ও বাজারজাত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর আমদানি করছে না কেন কিংবা আমদানিতে কী সমস্যা আছে ওই বিষয়ে কোনো ব্যবসায়ী এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।