Thursday , March 28 2024
প্রচ্ছদ / অর্থ-বানিজ্য / শ্রীলঙ্কাকে ২৯০ কোটি ডলারের ঋণ দেবে আইএমএফ

শ্রীলঙ্কাকে ২৯০ কোটি ডলারের ঋণ দেবে আইএমএফ

ডেস্ক : ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কাকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার প্রাথমিক এক চুক্তিতে (স্টাফ লেভেল) পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এর অধীনে আগামী চার বছরে (৪৮ মাস) এই অর্থ শ্রীলঙ্কাকে দেয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি ঘোষণা দিয়েছে।
ভয়াবহ এই অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থার কাছে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা চেয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্র। পিটার ব্রুর এবং মাসাহিরো নোজাকির নেতৃত্বে একটি আইএমএফের প্রতিনিধি দলের কলম্বোতে টানা ৯ দিনের আলোচনা শেষে দেয়া এক বিবৃতিতে দেশটিকে ২৯০ কোটি ডলারের ঋণ প্রদানের সম্মত হয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।

আইএমএফ দলটি রাষ্ট্রপতি ও অর্থমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে, প্রধানমন্ত্রী দিনেশ গুনাবর্র্দেনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অফ শ্রীলঙ্কার গভর্নর ড. পি. নন্দলাল ওয়েরাসিংহে এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সরকারি এবং সিবিএসএল কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছে ৷ এছাড়াও সংসদ সদস্য, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সাথেও দেখা করেছে।

সংস্থাটি বলেছে, শ্রীলঙ্কার নতুন তহবিল-সমর্থিত কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঋণের কাঠামো পুনর্গঠন করা। ঋণের স্থায়িত্ব এবং অর্থায়নের মাঝে যে নিবিড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা থেকে পরিত্রাণের জন্য পাওনাদারদের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা এবং বহুপাক্ষিক অংশীদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থায়নের প্রয়োজন হবে শ্রীলঙ্কার।

আইএমএফ বলেছে, রাজস্ব বৃদ্ধি, ভর্তুকি বাতিল, নমনীয় বিনিময় হার নিশ্চিত এবং একেবারে তলানিতে নেমে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনে সম্মত হয়েছে শ্রীলঙ্কা।
এদিকে এই ঋণের বিপরিতে বেশ কিছু শর্ত ও সুপারিশ জুড়ে দিয়েছে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি।

আইএমএফ-এর শর্ত
১.আর্থিক একত্রীকরণ সমর্থন করার জন্য রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত আয়করকে আরও প্রগতিশীল করা, কর্পোরেট আয়কর এবং ভ্যাটের জন্য করের ভিত্তি প্রসারিত করা। যাতে করে ২০২৪ সালের মধ্যে জিডিপির ২.৩ শতাংশ প্রাথমিক উদ্বৃত্তে পৌঁছানো যায়। ২.রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভূত আর্থিক ঝুঁকি কমাতে জ্বালানি ও বিদ্যুতের জন্য খরচ-পুনরুদ্ধার ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ করা। দলটি কর্তৃপক্ষের ইতিমধ্যে ঘোষিত উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ব্যবস্থা এবং শক্তি মূল্য সংস্কারকে স্বাগত জানিয়েছে।

৩.সামাজিক ব্যয় বাড়িয়ে দরিদ্র এবং দুর্বলদের উপর বর্তমান সংকটের প্রভাব প্রশমিত করা, এবং সামাজিক সুরক্ষা নেট কর্মসূচির কভারেজ এবং লক্ষ্যমাত্রা উন্নত করা।

৪. ডেটা-চালিত মুদ্রানীতির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা এবং শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন যা একটি নমনীয় মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ব্যবস্থা অনুসরণ করা।

৫.ঋণ প্রোগ্রামের অধীনে ব্যাপক নীতি প্যাকেজ দ্বারা সমর্থিত বাজার-নির্ধারিত করা এবং নমনীয় বিনিময় হার পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বৈদেশিক রিজার্ভ পুনর্গঠন করা।

৬.একটি স্বাস্থ্যকর এবং পর্যাপ্ত পুঁজিযুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এবং একটি সংশোধিত ব্যাংকিং আইনের মাধ্যমে আর্থিক খাতের নিরাপত্তা এবং নিয়ন্ত্রক মান উন্নত করার মাধ্যমে আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা।

এছাড়াও সংস্থাটির বিৃবতিতে বলা হয়, আইএমফের ঋণ পরিশোধ ও অর্থায়নের ব্যবধান দূর করতে শ্রীলঙ্কার ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি ও বহুপক্ষীয় অংশীদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থায়নের নিশ্চয়তার প্রয়োজন পড়বে।

স্বাধীনতা লাভের পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারির কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধস, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শূন্যে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়র পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের মতো জরুরি পণ্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি।

এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংকটও দেখা দেয় শ্রীলঙ্কায়। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রথমে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। দেশটির সংকটময় পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রনিল বিক্রমাসিংহে। যিনি গত মঙ্গলবার সংসদে তার প্রথম বাজেট পেশ করেছেন।