অনলাইন ডেস্ক :
১৭ আগস্ট ২০২৪
অন্তর্বর্তী সরকারের যুক্ত হয়েছেন আরো কয়েকজন উপদেষ্টা।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছিলো।
গত ০৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টাসহ মোট ১৭ জন উপদেষ্টা শপথ গ্রহণ করেছিলেন।
উপদেষ্টা পরিষদে নতুন যে চার জন যুক্ত হয়েছেন তারা সহ মোট সদস্য সংখ্যা হবে ২১ জন।
উপদেষ্টা হিসেবে আজ শপথ নিয়েছেন— ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আলী ইমাম মজুমদার, ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ একজন সুপরিচিত বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ। ১৯৪৮ সালের পহেলা জুলাই নোয়াখালী জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করেছেন। পরে ১৯৬৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।
তারপরের বছর তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএসসি (মাস্টার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। সে বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।
এরপর তিনি আরও উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ইংল্যান্ড যান। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল, এই সময়ের মাঝে তিনি ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন এবং ২০১১ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
তার শিক্ষাজীবনের মতো কর্মজীবনও বেশ বর্ণাঢ্য। ড. মাহমুদ ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টার, জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (ইউএন-সিডিপি) সদস্য।
সেইসাথে, তিনি সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইকোনমিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসএএনইআই) চেয়ারম্যান। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তিনি পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি দীর্ঘ সময় এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন।
আলী ইমাম মজুমদার
আলী ইমাম মজুমদারের জন্ম ১৯৫০ সালে। ৭৪ বছর বয়সী সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মি. মজুমদার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
সেখান থেকে তাকে এখন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য করার কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে।
২০০৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বরে অবসরের আগ পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
সে সময় অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মুখ্য সচিবেরও দায়িত্বও তিনি পালন করেন। তার আগে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন।
১৯৭৭ সালে প্রশাসন ক্যাডারের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া আলী ইমাম মজুমদার পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) বিভিন্ন প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবেও তিনি কাজ করছেন।
আলী ইমাম মজুমদার চাকরি জীবনে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সহকারী কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ উপজেলা ও জেলায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
কুমিল্লার সন্তান মি. মজুমদার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন।
ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানও একজন সুপরিচিত অর্থনীতিবিদ। তিনি ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ওয়েবসাইট থেকে এমনটাই জানা যায়।
তার আগে ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড-এর (ইডকল) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. এম ফওজুল খান ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস অ্যাট বোস্টন, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে পার্ট-টাইম ও ফুলটাইম ফ্যাকাল্টি হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন।
তিনি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, ইউএনডিপি, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের একজন শীর্ষ পরামর্শক।
তার বাড়ি সন্দ্বীপের হরিশপুর গ্রামে। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড পাওয়ারের পরিচালনা পরিষদে ইনডিপেন্ডেন্ট পরিচালক হিসাবে আছেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
মুন্সিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা ৭১ বছর বয়সী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমান বিজিবি) মহাপরিচালক ছিলেন।
এরপর ২০০৬ সালের জুন থেকে ২০০৭ সালের জুন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি ও সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনের ঘটনাপ্রবাহে সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মধ্যে মি. চৌধুরীও ছিলেন বলে জানা যায়।
২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের পর সেনাবাহিনীর গঠিত তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেন তিনি। তখন তিনি কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) ছিলেন।
ওই বছরই তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। ২০১০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশন করেন। একজন গানার হিসেবে কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কমান্ডিং টু আর্টিলারি ব্রিগেডসসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন বলে জানা যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।