আজ (রোববার) মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে ২২ দিনের ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছেন কক্সবাজারের ৫০ হাজারের বেশি জেলে। ইলিশের আশায় সাগরে যেতে ট্রলারগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
নিষেধাজ্ঞাকালীন অনেক জেলে তাদের জীবিকা নির্বাহে পড়েছেন চ্যালেঞ্জের মুখে। সংসারের খরচ মেটাতে অধিকাংশ জেলেকেই নিতে হয়েছে ঋণ। এখন কাঙ্ক্ষিত ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফিরে সেই ঋণ শোধ করার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন ঘাটে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে কেউ ট্রলার ও নৌকা মেরামত করছেন। কেউ নতুন ও মেরামত করা জাল, জ্বালানি এবং খাদ্যসামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছেন। কেউ আবার সৈকতের টিলায় অথবা ডকে নোঙর করে রাখা ট্রলার ও নৌকা ধোয়া মোছার কাজ করে সমুদ্রযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জেলেরা আশা করছেন, নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে পর্যাপ্ত ইলিশ মিলবে এবং তাদের সংসারে আবার ফিরে আসবে সুখের সুবাতাস। কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া এলাকার ৩৫ বছর ধরে জেলে পেশায় যুক্ত থাকা শাকের উল্লাহ মাঝি বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে সাগরে গিয়ে মাছ ধরতে না পেরে সংসার চালাতে কষ্ট হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চলেছে। এখন সাগরে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ নিয়ে ফিরতে পারলেই ঋণ শোধ করতে পারবো বলে আশা করছি।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথেই যাতে মাছ ধরার জন্য সাগরে রওয়ানা দেওয়া যায় সেই লক্ষ্যে কক্সবাজারের অর্ধ লক্ষাধিক জেলে প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছেন। অন্যান্য জেলেরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জানান, কক্সবাজারে মাছ ধরার ছোট বড় ৮ হাজার যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় ১ লাখ জেলে শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন।
শহরের ফিশারিঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত ১৩ অক্টোবর থেকে সাগরে মাছ ধরার উপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর থেকেই মাছের অভাবে সাগরপাড়ের এ শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাট খাঁ খাঁ করছিল। জেলেদের প্রস্তুতির কারণে ফিশারিঘাটসহ জেলার জেলে পল্লীগুলোতে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।’
তিনি জানান, রোববার দিবাগত রাত ১২টার পর নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার পর জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে রওয়ানা দেবে। তবে ইলিশ ধরে ঘাটে ফিরতে জেলেদের ৪/৫ দিন সময় লাগতে পারে। আর তখন থেকেই বাজারে ইলিশ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
ফিশারিঘাটের পাশাপাশি শহরের দরিয়ানগর সৈকত, রেজু, ইনানী ও শামলাপুর, শিলখালী, জাহাজপুরা, টেকনাফ জিরো পয়েন্ট, সাবরাং সৈকতসহ অন্যান্য জেলে পল্লীতেও চলছে জেলেদের জোর প্রস্তুতি।
উল্লেখ্য, ইলিশের প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রজনন মৌসুমে ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে সরকার প্রতি বছর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে সামগ্রিক ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।