সকল মেনু

বরগুনায় পানিবন্দি দিন কাটছে উপকূলীয় বাসীর 

রাকিবুল ইসলাম রাজন,বরগুনা প্রতিনিধি:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে বরগুনায় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে বড়ইতলা ফেরিঘাটের সড়ক। পারাপার বন্ধ রয়েছে যানবাহন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার চলছে।

শুক্রবার (৩০ মে) সকাল থেকে পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

বরগুনার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীতে বিপদ সীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে জোয়ারের পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে করে বরগুনা পৌরশহরের নিম্ন অঞ্চল ও উপকূলীয় চরাঞ্চলের বহু নীচু এলাকা তলিয়ে গেছে। নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে উঁচু জোয়ারের চাপে বড়ইতলা ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে ডুবে যাওয়ায় ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে যাত্রী ও যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।

দুর্ভোগে পড়ছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও অমাবস্যার কারণে নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বাড়িঘর, দোকানপাট ও রাস্তাঘাটে পানি ঢুকে পড়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের এমন প্রভাবে বরগুনাবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, এবং জনসাধারণের মাঝে উদ্বেগ বাড়ছে। পৌর শহরের পানি নিষ্কাশনের পথগুলোর ওপর পর্যাপ্ত নজর না থাকায় জলাবদ্ধতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।

২০২৪ সালের ২৬ মে সন্ধ্যা থেকে ২৭ মে সকাল নাগাদ স্থলভাগ অতিক্রম করে তীব্র ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ঘূর্ণিঝড় রেনালের পরে উপকূলীয় জেলায় তেমন কোনো কাজ হয়নি।
তাই উপকূল অরক্ষিত আছে অনেক বেরিবাঁধ তাই জোয়ারের পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে গেছে অনেক গ্রাম।

বরগুনা সদরের ঢলুয়া,নলি,পালের বালিয়াতলী,ডালভাঙ্গা,মাজের চর,আমলকিতলা ও মাজখালির বাঁধ ভেঙেছে এবং পাথরঘাটা উপজেলার মানিকখালী এলাকায় বেরিবাঁধ ভেঙ্গে চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে তাই পানিবন্দি হয়ে দিন কাটছে ২৩০ পরিবারের।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে বরগুনার নদ -নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ সেন্টিমিটার এর উপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় বরগুনায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

বড়ইতলা গ্রামের বাসিন্দা আমীন হোসেন বলেন, প্রতিবছর এমন দুর্যোগে আমরা ভোগান্তিতে পড়ি। নদীর পাশে থাকা একটি খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করে পুরো গ্রাম প্লাবিত হয়। আজকের জোয়ারে আমাদের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনো রকমে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি, খাওয়ার কিছু নেই।

ফেরি পার হতে এসে পাথরঘাটার সবুজ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, সকালে আমি বরগুনাতে আসছিলাম কাজে এখন এসে দেখি এখানে কোমর সমান পানি। ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে শুধু খেয়া চলছে। এ দুর্যোগে এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পার হতে হবে।

পাথরঘাটা উপজেলার মানিকখালী সুজন বলেন,অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মানিকখালী এলাকায় বেরিবাঁধ ভেঙ্গে চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেক মানুষ পানি বন্দী হয়ে আছি।

মাজের চরের মালিক মিয়া বলেন,ঘূর্ণিঝড় রেমালের পরে আমাদের গ্রামে কোনো কাজ হয়নি। রিং বেরী বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি। জীবন এখন বিপর্যয়।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আলম বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top