সকল মেনু

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি

ঢাকা: করোনা মহামারিতেও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও সময় লাগবে।

ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোয় নীতি সহায়তাসহ প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
কোরবানি ঈদের আগে সরকারের নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও গণপরিবহন সচল থাকায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা অর্থনীতির সব কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। ফলে ক্রমেই গতি ফিরছে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা- বাণিজ্যে। হাসি ফুটছে ব্যবসায়ীদের মুখে। একইসঙ্গে রপ্তানি আয় ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এসেছে রেকর্ড পরিমান রেমিট্যান্স, পুঁজিবাজারে ফিরেছে গতি।

করোনা অর্থনীতির নানা খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও তুলনামূলক শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও কৃষিখাত।

অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি পুনরুদ্ধারে সরকারের বেশ কয়েকটি উদ্যোগ সহায়তা করেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১,০৩,০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স প্রবাহের সঙ্গে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। তবে রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান এখনও নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। সে কারণে অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে ফিরতে আরও সময় লাগবে। এজন্য করোনা মোকাবিলার ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোয় নীতি সহায়তাসহ প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

রেমিট্যান্সে রেকর্ড:
করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও প্রবাসীরা আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে প্রবাসীরা ২৬০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত বছরের জুলাইতে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১৫৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। এই হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে এক বিলিয়ন ডলারের মতো। একক মাস হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।

নতুন উচ্চতায় রিজার্ভ:
রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহতভাবে বাড়ার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ দশমিক ২৮৭ বিলিয়ন ডলারের সবোর্চ্চ রেকর্ড অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ৩০ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৬ দশমিক ০১৬ বিলিয়ন ডলার।

ইতিবাচক ধারায় রপ্তানি আয়:
নতুন অর্থবছরের শুরুতেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের রপ্তানি খাত। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৪৪ কেটি ৯০ লাখ ডলার। অথচ এই খাতে আয় হয়েছে ৩৯১ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রথম মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। একই সঙ্গে অর্জিত রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩৮৮ কোটি মার্কিন ডলার।

বাড়ছে আমদানি:
করোনার মধ্যেও আমদানিতে ইতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত জুন মাসে আমদানিতে প্রায় ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যদিও গত অর্থবছরে আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ।

পুঁজিবাজারে লেনদেনে উন্নতি:
দীর্ঘদিন ধরে নিস্তেজ পুঁজিবাজারেও গতি ফিরেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) জুন মাসের চেয়ে জুলাইয়ে শেয়ার লেনদেন বেড়েছে। বেড়েছে নতুন বিনিয়োগও। জুন মাসে চার হাজার ৭৮০ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া জুলাই মাসে এই লেনদেনের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার কোটি টাকা। আর মূলধন বেড়েছে ১৩ হাজার ৭৬৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সূচক বেড়েছে ২২৫ পয়েন্ট।

কৃষি ও সেবা খাত:
করোনাকালে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে কৃষি। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১৫.৪৪ শতাংশ অবদান কৃষি ও সেবা খাতের। কর্মসংস্থানেও বড় ভূমিকা রাখছে খাতটি। আয় কমে যাওয়ায় শহরত্যাগী মানুষগুলোকেও ধারণ করেছে গ্রামীণ অর্থনীতি।

উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর দেয় সরকার। এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে দফায় দফায় বাড়িয়ে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি চলে। জরুরি সেবা, কাঁচাবাজার, নিত্যপণ্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট, শপিং মল খুলে দেওয়া হয়। এরপর গণপরিবহনও চালু করা হয়। সর্বশেষ ঈদুল আজহার আগে দোকানপাট ও বিপণিবিতান রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top