সকল মেনু

মৌটুপী গ্রামে ৫৬ বছর ধরে চলা বংশীয় দ্বন্দ্বে ভবানীপুরে নিহত ১,আহত ২০

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি :
এ যেন সিনেমার কাহিনি!
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একই গ্রামের দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারে ৫৬ বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জের ছড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী গ্রামে। এতে মিজান মিয়া নামের একজন নিহত হয়েছে। আজ শুক্রবার উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে সকালে এক সালিশি দরবারে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

নিহত ব্যক্তি ভবানীপুর সোলাইমান পুর মইদর মুন্সিবাড়ির মৃত রবিউল্লাহ মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আনুমানিক আরো ২০ জন। এদের মধ্যে অপু মিয়া, আক্তার হোসেন, দুধ মিয়া ও পাপ্পু মিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহত অপু ও দুধ মিয়া কে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

জানা যায়, ৫৬ বছর যাবত চলছে ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে কর্তা বাড়ি ও সরকার বাড়ির দুই বংশের দ্বন্দ্ব। সরকার বাড়ি পক্ষে নেতৃত্ব দেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সরকার শেফায়াত উল্লাহ এবং কর্তা বাড়ির পক্ষে নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা তোফাজ্জল হোসেন। দুই বংশের দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের আগে আরো ১৪ জন খুন হয়েছে। নিহতের ঘটনায় করা মামলায় উভয় পক্ষের লোকজন জামিনে বাড়ি আসলে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে আবার সংঘর্ষ হয়। এতে ভবানীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন বংশ অংশ নেন। এসময় উভয় পক্ষের ৫০ জন আহত হয়। ওইদিন রাতেই মৌটুপীর ঘটনার জেরে পার্শ্ববর্তী গ্রাম ভবানীপুরেও সংঘর্ষ হয়। এতে বুদুর গুষ্টি অংশ নেন মৌটুপি গ্রামে কর্তা বাড়ি পক্ষে ও সোলাইমান পুরের মইদর মুন্সিবাড়ি অংশ নেন সরকার বাড়ির পক্ষে। পরে এই বিষয়টি মীমাংসার জন্য আজ শুক্রবার ১৮ (এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় ভবানীপুরের সালিশি দরবার হয়। দরবার চলাকালীন ১১টায় সময় ভবানীপুরের নামাপাড়া বুদুর গুষ্টি বাদশা ডাকাতের গ্রুপ ও সোলাইমান পুর মইদর মুন্সিবাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে প্রতিপক্ষের টেটার আঘাতে সোলাইমান পুরের মইদর মুন্সিবাড়ির মিজান মিয়া নামের একজন আহত হয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে নিহতের ভাই পারভেজ মিয়া বলেন, আমার ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি মোটুপী গ্রামে। সেখানে অনেক বছর যাবত ঝগড়া মারামারি এমনি অনেকে খুনও হয়েছে। কয়েকদিন আগে সেখানে দুই বংশের সংঘর্ষ হয়। এ বিষয়টি আমাদের ভবানীপুর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। আজ সকালে ভাবানীপুর গ্রামের নেতৃবৃন্দের সহায়তার মীমাংসা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সালিশি দরবারে আমাদের গ্রামের দুই পক্ষের বাকবিতণ্ডায় এক পর্যায়ে সংঘর্ষে আমার ভাইকে বুদুর গুষ্টির লোকজন মেরে ফেলেছে। আমার ভাই তিন সন্তানের জনক। তিনি ডেকোরেশন কর্মী ছিলেন। আমরা এর বিচার চাই।

এ বিষয়ে ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. নাজমুস সাকিব বলেন, মৌটুপী গ্রামের বংশীয় দ্বন্দ্বের আছ ভবানীপুর গ্রামেও এসে লাগে। এই নিয়ে ভবানীপুরে আগে একটি সংঘর্ষ হলে আজ সকালে এই নিয়ে গ্রামের লোকজন একটি সালিশি দরবারে বসে। সালিশি দরবারে এখানকার কিছু লোক উসকানিমূলক আচরণ করলে এই নিয়ে দুই বংশের লোকজন আবার সংঘর্ষে জড়ায়। এতে টেটার আঘাতে একজন নিহত হয়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top