Print

SomoyKontho.com

ধূমপানের চেয়েও ক্ষতিকর ভ্যাপিং

প্রকাশিত হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৫ , ৪:২৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৫, ৪:২৫ অপরাহ্ণ

সময়কন্ঠ ডেস্ক

অনেকেই নিকোটিন বাদ দিয়ে শুধু ধূমপান করার জন্য ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং করেন। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে ধূমপানের চেয়েও ক্ষতিকর ভ্যাপিং। এতে উঠে আসে, নিয়মিত ই-সিগারেট ব্যবহার বা ভেপিংয়ের ফলে ব্যবহারকারীদের ডিমেনশিয়া, হৃদরোগ ও অঙ্গ অকেজো হয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

অনেকেই ভ্যাপিংকে সাধারণত সিগারেটের চেয়ে নিরাপদ এবং ধূমপান ছাড়ার জন্য কার্যকর একটি উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে গবেষণা বলছে, প্রায় আট শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ভ্যাপ ব্যবহার করার আগে কখনো ধূমপান করেননি।

‘ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা বলছেন, এসব ভ্যাপিং ডিভাইস সিগারেটের চেয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

তারা জানান, ই-সিগারেটের মাধ্যমে মানুষ ভ্যাপের মধ্যে নিকোটিন গ্রহণ করে, যা শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবাহিত হয়। এই ভ্যাপ সাধারণত প্রোপিলিন গ্লাইকল, গ্লিসারিন, ফ্লেভারিং এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান গরম করে তৈরি করা হয়।

ভ্যাপিংয়ের মাধ্যমে উচ্চমাত্রার নিকোটিন গ্রহণ হার্টরেট এবং রক্তচাপ বাড়ানোর পাশাপাশি রক্তনালী সংকুচিত করে এবং ধমনির প্রাচীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।তারা এই অভ্যাস পরিত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যারা ভ্যাপ ব্যবহার করছেন তাদের বিপদ ধূমপায়ীদের থেকে একেবারেই আলাদা নয়।

হৃদরোগ পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞ এবং এই গবেষণার প্রধান গবেষক ড. ম্যাক্সিম বোইডিন বলেন, ধূমপায়ীদের মধ্যে বাইরে গিয়ে ধূমপান করার প্রবণতা থাকে এবং একবার একটি সিগারেট শেষ হলে তারা পরবর্তী সিগারেট জ্বালান। কিন্তু ভ্যাপের ক্ষেত্রে, আপনি চাইলেই এটিকে অবিরত গ্রহণ করতে পারেন। অনেক সময়, কতগুলো পাফ টেনেছেন তাও মনে রাখা কঠিন হয়। তাই ভ্যাপ গ্রহণের প্রক্রিয়া থামানো বা বিরতি দেওয়া অনেক কঠিন। কারণ, এমন অনেক জায়গায় আপনি এটি গ্রহণ করতে পারেন যেখানে ধূমপান নিষিদ্ধ।

যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস’ বা এনএইচএস-এর প্রধানরা ভেপিংকে ধূমপানের চেয়ে নিরাপদ বলে দাবি করলেও বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন যে, ভেপিং একেবারেই ঝুঁকিমুক্ত নয়।

তারা জানাচ্ছেন, ই-সিগারেট বা ভ্যাপের মধ্যে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ থাকে, যেগুলোর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি।

চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, যারা অল্প বয়সে ভ্যাপিং শুরু করেছেন, আগামী দশকে তাদের মধ্যে ফুসফুসের রোগ, দাঁতের সমস্যা এবং ক্যান্সারের মতো রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে।

এই গবেষণায় গড়ে ২৭ বছর বয়সি অংশগ্রহণকারীদের ওপর নজর দেওয়া হয়, যাদের শারীরিক ফিটনেস ছিল সমান। তাদের দেহের রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা এবং মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের গতি পরিমাপ করতে নিয়মিত স্ট্রেস টেস্ট করা হয়েছে।এই পরীক্ষার ১২ ঘণ্টা আগে তারা শুধু পানি পান করেছিলেন এবং এই সময়ে ভ্যাপ, ধূমপান বা ব্যায়াম থেকে বিরত ছিলেন।

ড. বোইডিন বলেছেন, ‘মেডিয়েটেড ডাইলেশন’ বা এফএমডি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের হাতে একটি কাফ বসানো হয়, যাতে এর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ধমনি কতটা প্রসারিত হয় তা পরিমাপ করা যায়। এটি ভ্যাপিংয়ের বিভিন্ন প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে সহায়ক হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এই গবেষণায় ধূমপায়ী এবং ভ্যাপারদের দুজনেরই ‘ফ্ল্যাট রিডিং’ এসেছে, যা নির্দেশ করে তাদের ধমনির প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতে গুরুতর হৃদরোগের সমস্যা হতে পারে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ধূমপায়ী এবং ভ্যাপারদের রক্তপ্রবাহ একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে তাদের ডিমেনশিয়া বা কাজের প্রতি অনীহার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

ড. বোইডিন বলেন, আপনার শরীরে নানা পদার্থ ও রাসায়নিকের মিশ্রণ প্রবেশ করাবেন আর আপনার কিছুই হবে না– এমন আশা করতে পারেন না। ভ্যাপিংয়ের কেবল একটি সুবিধা রয়েছে, তা হচ্ছে মানুষকে ধূমপান ছাড়তে সহায়তা করা। তবে কেউ যদি ধূমপান ছেড়ে ভ্যাপিং গ্রহণ চালিয়ে যান তবে ফলাফল একইরকম হবে।

প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আব্দুল করিম
সম্পাদকীয় কার্যালয়: এস করিম ভবন, তৃতীয় তলা ৪৩, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট ঢাকা- ১২০৫
ফোন: 02 9356582, মোবাইল: 01715635623, ইমেইল: [email protected]