Print

SomoyKontho.com

১৮ জুলাই ২০২৪: ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ

প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৮, ২০২৫ , ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: জুলাই ১৮, ২০২৫, ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ

সময়কন্ঠ ডেস্ক

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই। রাজধানীর উত্তরা এলাকা। ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ সফল করতে বেলা ১১টা থেকেই অবরুদ্ধ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর টানা কয়েক ঘণ্টা সংঘর্ষ চলে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে। ছোড়া হয় টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড। বিপরীতে শিক্ষার্থীরা ছোড়ে ইট-পাটকেল। পুলিশের গাড়ি চাপা দেয় আন্দোলনকারীদের, যা ধরা পড়ে যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরায়।

পুলিশের সেই বর্বরোচিত অ্যাকশনে হতাহত হন অনেকে। যাদের উত্তরা আধুনিক মেডিকেল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। যা সেসময়ই প্রচার করে যমুনা টেলিভিশন। সন্ধ্যাতেই শুধু উত্তরায় মেলে ৮ জনের মৃত্যুর সংবাদ, যার একজন ছিলেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ।

মহাখালীতেও হয় ব্যাপক সংঘাত। এসময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ও বনানী সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সংঘর্ষ থেকে বাদ যায়নি মিরপুরও। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিরপুর-১০ নম্বরের পুলিশ বক্সে আগুন দেয়। গোলচত্বরের নিচে বাসে দেয়া আগুনের ধোঁয়া ওঠে মেট্রোরেলে। পরে চারটি স্টেশন বন্ধ হয়।

ধানমন্ডিতেও পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সাথে সংঘর্ষ হয় ছাত্র-জনতার। এদিন ২৭ নম্বরে পুলিশের গুলিতে মারা যান রাজধানীর রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজ। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ঢাকা ঢাকা টাইমসের মেহেদি হাসানসহ নিহত হন দুজন সাংবাদিক।

প্রগতি সরণি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বেসরকারি চার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দেয় কোটাবিরোধী স্লোগান। ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়েও পুলিশ নির্বিচার গুলি চালায় এদিন। সহিংসতায় নিহত হয় অনেকে।

শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে র‍্যাবের হেলিকপ্টারে পালাতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। হেলিকপ্টার থেকে গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।

এদিন বেলা ১২টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে দেশের অধিকাংশ জেলার রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। রাত ৯টার পর থেকে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়।

রাতভর চলা সংঘর্ষের পর ভোর থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়া এলাকা ছিলো থমথমে। ঢাকাসহ সারাদেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। করা হয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।

এদিন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোটা সংস্কারে নীতিগতভাবে একমত হয় সরকার। জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি সরকার।

তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সাফ জানিয়ে দেন, গুলি আর আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এক বিবৃতিতে জানান, শহীদের রক্তের ওপর কোনো সংলাপ হবে না।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগ থেকে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য চলতে থাকে যথারীতি। নিজ নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি করে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস।

সারাদেশে ঐদিন আন্দোলনে ছড়িয়ে পড়ে বারুদের মতো। প্রতিবাদ, ঘৃণা আর ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে দেশবাসী। নরসিংদী, চট্টগ্রাম, সাভার, মাদারীপুর, রংপুর ও সিলেটে ৮ জন নিহত হয়। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) তথ্য অনুযায়ী, এদিন সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ নিহত হন অন্তত ৩১ জন।

প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আব্দুল করিম
সম্পাদকীয় কার্যালয়: এস করিম ভবন, তৃতীয় তলা ৪৩, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট ঢাকা- ১২০৫
ফোন: 02 9356582, মোবাইল: 01715635623, ইমেইল: [email protected]