Print

SomoyKontho.com

শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ১৩, ২০২৪ , ১১:২২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ণ

সময়কন্ঠ ডেস্ক

সময়কন্ঠ ডেস্ক :
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১১:২০ এএম

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। দেশে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলার করা হবে হবে মন্তব্য করেন সাখাওয়াত হোসেন। সোমবার (১২ আগস্ট) বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ অফিস কক্ষে গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে। কেবল শেখ হাসিনাই নয়, মামলায় হুকুমের আসামি হবেন আরো অনেকেই। একইসঙ্গে পুলিশের পদস্থ যেসব কর্মকর্তা গুলির নির্দেশ দিয়েছেন, যারা মাঠে থেকে নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছেন তারাও পার পাবে না।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, খুব শীঘ্রই পরিবর্তন করা হবে পুলিশের লোগো এবং পোশাক। ভবিষ্যতে কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ কাজ করবে না। পুলিশ পরিচালনা করা হবে একটি কমিশনের মাধ্যমে। শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে কমিশন গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া পুলিশের কাছ থেকে প্রত্যাহার করা হবে প্রাণঘাতী সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার পক্ষে এখন ভারত ছাড়া আর কেউ নেই। তারা যদি বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব না দিয়ে শেখ হাসিনার পক্ষেই অবস্থান ধরে রাখেন তাহলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী-জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্ট্রাকচার ভেঙে পড়েছে, তাই এটা ঠিক করাই এখন আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ।

আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বড় একটি ঘটনা ঘটানো হয়েছে। দেশের মানুষের মনে বাহিনীটি সম্পর্কে এখন ঘৃণা জন্মেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও এখন তাদের কাজের জন্য অনুতপ্ত।

পুলিশ সদস্যরা আমাকে ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, তাদের দিয়ে অপকর্ম করানো হয়েছে, নিজেদের ঘৃণার পাত্র বানানো হয়েছে। এর দায় সিনিয়র অফিসার ও অন্যদের। তাই বর্তমান ইউনিফর্ম পরে পুলিশ আর ডিউটি করতে চাচ্ছেন না। তারা এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন। আমি আমার ব্যক্তিগত ইমেজ দিয়ে আপাতত পুলিশের সমস্যার সমাধান করেছি। কিন্তু পুরো স্ট্রাকচারকে একটি পর্যায়ে আনতে একটু সময় লাগবে।

তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৫৭ সেনা কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যার কোনো কূলকিনারা হয়নি। আমি এই দুটি ঘটনার শেষ দেখতে চাই। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি কোনো আরাম-আয়েশের জন্য উপদেষ্টা হইনি। যে যাই বলুক না কেন, আমার কাজ করতে চাই। তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে চেয়ারে বসতেন সেই চেয়ার পরিবর্তন করে ফেলেছি। আমি একটি নরমাল চেয়ারে বসি। যে টেবিলটি রয়েছে সেটিও সরিয়ে ফেলব। অতীতে এই চেয়ারে বসে অনেক অন্যায় কাজের আদেশ দেয়া হয়েছে। আমি সেসব করতে চাই না। যারা অপকর্ম করেছেন তাদের সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যেসব কর্মকর্তা বিদেশে পলাতক তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। অপকর্মের হুমুকের আসামি, হুকুম বাস্তবায়নের ইমিডিয়েট অফিসার, যারা ফারদার অর্ডার দিয়েছে, মাঠে যারা বাহিনীর সাধারণ সদস্যদের গুলি করতে বলেছে, লোড করতে বলেছে- তাদের সবার বিরুদ্ধেই তদন্ত হবে। এটি একটি বড় ধরনের অনুসন্ধান। এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনুসন্ধান হবে উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা জাতিসংঘকে বলেছিল, তদন্তে কোনো সহযোগিতা লাগলে তারা করবে। আমরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতিসংঘের সহায়তা চাইব। হুকুমের যে বিষয়টা আছে, সে বিষয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চিঠি লেখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারা কারা হুকুমদাতা তাদের তালিকা করা হবে। এ বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে আইন মন্ত্রণালয় থেকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এর সঙ্গে যুক্ত থাকবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা অত্যন্ত মেধাবী। কখন কোথায় কী করতে হবে সে বিষয়টি তারা বোঝে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ৬ সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি কালেকটিভ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ সুযোগসন্ধানী মহলকে দেশের বাইরে থেকে প্ররোচনা দেয়া হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধেও প্রোপাগান্ডা চলছে।

যারা কিছুদিন আগে এ দেশ শাসন করেছে তাদের সঙ্গে ভারত ছিলো উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ইন্ডিয়া আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিলে ভুল করবে। তারা লুজার হবে। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ায় অনেক দেশ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা শেষের দিকে এসে বলেছেন, পুলিশ কাউকে হত্যা করেনি। হত্যা করেছে দুষ্কৃতকারীরা। তাহলে আমার প্রশ্ন, কজন দুষ্কৃতকারীকে আপনারা ধরেছেন? কজনের কাছ থেকে সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু অস্ত্র উদ্ধার করেছেন? এই অস্ত্র তো পুলিশের হাতে। এই গুলিতে আহত হয়েছেন আনসার সদস্যরাও। পুলিশের কাছ থেকে এই মারণাস্ত্র উঠিয়ে নেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অস্ত্র পুলিশ ব্যবহার করতে পারে না। বিশেষ উদ্দেশ্যেই এই অস্ত্র তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, গত ১৫ বছর যত দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে সবকিছুর বিচার হবে। এ বিষয়ে দুদককে বেশি অ্যাকটিভ হতে হবে। তাদের জনবল বাড়াতে হলে বাড়াব।

প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আব্দুল করিম
সম্পাদকীয় কার্যালয়: এস করিম ভবন, তৃতীয় তলা ৪৩, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট ঢাকা- ১২০৫
ফোন: 02 9356582, মোবাইল: 01715635623, ইমেইল: [email protected]