অনলাইন ডেস্ক: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকতের বৈশিষ্ট্য হলো- পুরো এলাকাটি বালুকাময়, কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। পর্যটকরা যাতে নিরাপদভাবে এ সৈকতে ভ্রমণ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে আগামী তিন বছরের মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
একই সঙ্গে পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প (এমআরটি), কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের মতো এটিও ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব তথ্য জানান।
একনেক বৈঠকে ‘দোহাজারি থেকে রামু হয়ে ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল ট্র্যাক নির্মাণ’ নামক প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় পর্যটন এলাকা কক্সবাজার থেকে মায়ানমারের কাছে ঘুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে রেলপথটি নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ছিল মাত্র ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এখন বেড়ে ব্যয় দাঁড়ালো ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
প্রকল্পের অাওতায় রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার এবং রামু থেকে মায়ানমারের কাছে ঘুনধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপে ১২৯ দশমিক ৫৮৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে।
ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে প্রকল্পটি সংযোগ স্থাপন করবে। ফলে রেলপথ যাবে কক্সবাজারেও। প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়, সম্পূর্ণ হবে ২০২২ সালের জুন মাসে।
এটিসহ একনেক বৈঠকে মোট ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ১৮ হাজার ৫৬৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকিটা সরকারি ফান্ড (জিওবি) থেকে ব্যয় করা হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘দোহাজারি থেকে রামু হয়ে ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল ট্র্যাক নির্মাণ’ মূল প্রকল্প থেকে সংশোধিত প্রকল্পে কাজের অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। মূল প্রকল্পের আওতায় মোট ১২৭ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার রেলপথ সিঙ্গেল লাইন হওয়ার কথা থাকলেও এখন ডুয়েল গেজ ট্রাকে নির্মাণ করা হবে। যে কারণে ৬০৩ শতাংশ ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বর্তমানে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে সড়ক পথই যোগাযোগের মাধ্যম। তবে জলপথে যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটন ও ব্যবসায়ীদের চাহিদার তুলনায় এই পথ যথেষ্ট নয়। বর্তমানে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। পর্যটন বৃদ্ধির জন্য কক্সবাজার পর্যন্ত রেলওয়ে লাইন জরুরি।
নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে বলে জানায় রেলপথ মন্ত্রণলয়।
ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রকল্প সংশোধনের কারণ
কাজের ব্যাপ্তি ও নকশার মানগুলোর আমূল পরিবর্তন হয়েছে। কাজের ব্যাপ্তি ও নকশার পরিবর্তনের ফলে মূল প্রকল্প থেকে সংশোধিত প্রকল্পে ১১ হাজার ১৭৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম সিঙ্গেল থেকে ডুয়েল গেজ, প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট ও ফিজিক্যাল কন্টিজেন্সি খাতে ১ হাজার ৬৬৯ কোটি, ভ্যাট খাতে ৭১৬ কোটি ও ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ১ হাজার ১১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বৃদ্ধি। এতে করে মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) থেকে সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় ৬০৩ শতাংশ বাড়তি করা হয়েছে। এছাড়া মূল ডিপিপি থেকে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৬০ দশমিক ৪৭ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে।
প্রকল্পের পরিকল্পনা ব্রিটিশ আমলের। নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি। ১৮৯০ সালে মায়ানমার রেলওয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে রামু ও কক্সবাজার হয়ে মায়ানমার (তখনকার বার্মা) পর্যন্ত রেলওয়ে লাইন নির্মাণের জন্য সার্ভে করা হয়েছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০৮ থেকে ১৯০৯ সালে মায়ানমার রেলওয়ে সার্ভে করে। চট্টগ্রামের সঙ্গে আকিয়াবের (মায়ানমার) রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে দোহাজারি থেকে রামু হয়ে আকিয়াব পর্যন্ত ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সালে পুনরায় সার্ভে করা হয়।
সে মোতাবেক চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে কক্সবাজারের রামু পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৫৮ সালে তখনকার পূর্ব বাংলা রেলওয়ে চট্টগ্রামের দক্ষিণ দিক থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য সার্ভে করেছিল। যার উদ্দেশ্য ছিল কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা।
পরবর্তীতে জাপান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সার্ভিস (জেআরটিএস) ১৯৭১ সালে রেলওয়ে লাইনটির ট্রাফিক সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য সমীক্ষা করে। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে জেআরটিএস ১৯৭৬-৭৭ সালে ডাটা সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করে। পরে ১৯৯২ ও ১৯৯৫ সালে দেশি ও বিদেশি পরামর্শক এ রেলপথ নিয়ে নানা ধরনের স্ট্যাডি করে। কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি রেলপথটি।
এদিকে রামু এলাকায় হাতিদের নিরাপদ বিচরণের জন্য ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যেখানে হাতিদের আনাগোনা বেশি সেখানে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। নিচ দিয়ে রেলপথ চলে যাবে এবং ওপর দিয়ে হাতি চলাচল করবে। প্রকল্পটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রেলপথটি নির্মাণ করা হলে পর্যটন খাতের অনেক উন্নয়ন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রেলপথের মাধ্যমে মায়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডে যাতায়াত করতে পারবো আমরা।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আব্দুল করিম
সম্পাদকীয় কার্যালয়: এস করিম ভবন, তৃতীয় তলা ৪৩, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট ঢাকা- ১২০৫
ফোন: 02 9356582, মোবাইল: 01715635623, ইমেইল: [email protected]